সামাজিক ব্যাধি : গঙ্গা জলে নারী পুজো
– অমরেশ কুমার
হিংসার বিভীষিকাময় রূপ,
আজ এই অ্যাসিড আক্রান্ত;
ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম হয়ে উঠেছে,
এই সামাজিক ব্যাধি।
প্রণয় কিংবা পরিবার, অথবা, বিচ্ছেদ,
ক্রমাগত ঘটিয়ে চলেছে.. কুৎসিত, এ ব্যাধি।
আবেগ কিংবা দুঃখ শুধু নয়,
সুনির্দিষ্ট, পরিকল্পিত, লিঙ্গ ভিত্তিক এই সামাজিক ব্যাধি।
বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বময়, আক্রান্ত, ভারাক্রান্ত, জরাজীর্ণ,
বহু সমালোচিত এই ব্যাধি।
এ, লজ্জা যে, সম্পূর্ণ একান্তই;
তাই, বয়ে বেড়াতে হয়ও একাই।
জানি, তুমি আবেগে ভাসবে,
কিন্তু, প্রতিবাদ!
..এগিয়ে আসবে না ,
আমি নিশ্চিত, সমালোচনার ঝড় বইবে,
কিন্তু, আমার মনের ঝড়ের হাওয়ার,
গতি পরিমাণ করতে, কেউ আসবে না।
দিনে দিনে বেড়ে চলেছে,
কেউ বা প্রকাশ্যে, কেউ বা অন্ধকারে আচ্ছন্ন; চলমান মৃতদেহ নিয়ে ছুটে চলা।
গ্রাম, শহর কিংবা শহরতলীতে,
ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে হেঁটে চলে
কত মায়েরা, কত বোনেরা..
কেউ আক্রান্তে মৃত,
কেউ, পুনরায় আক্রান্তের ভয়ে
জরা, বধির ।
যেটুকু দেহে প্রাণ, তাও যদি নেয় কেড়ে ।
দেহ ?
সে তো কবেই অধিকার করে বসে আছে,
অধিকারের বশে, ক্রমাগত
ঘটে চলে এই মহামারি আক্রান্ত ।
প্রতিবাদ ?
..হাস্যকর,
চুপ! চুপ!
– সব বুদ্ধিজীবীরা দেখছে,
চুপিসারে, ফাইল তৈরি হচ্ছে।
জামিন?
– জেলে যাওয়ার আগেই হয়ে গেছে ।
জরিমানা?
-বালাই ষাট,
ধর্ষণেও ধর্ষকের উকিল মেলে,
আর এখানে, না বলাই থাক।
হাজার হাজার স্বপ্ন, না বলা কথা,
চোখের জলে আর প্রভাবশালীদের ভিড়ে
হারিয়ে যাচ্ছে,
যবনিকার ন্যায় রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে জীবন ।
ওইতো, মেয়েটি সবেমাত্র কলেজে উঠেছে,
সামনে রঙিন ভবিষ্যৎ ।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন,
কিন্তু, স্বপ্ন আর পূরণ হলো না,
দু’দিনেই শেষ হল ।
পাশের পাড়ার বিপ্লব, তাকে ভালোবাসে,
তার ভালোবাসায় মেয়েটির জীবন পুড়ে গেল ।
ভালোবাসার আরেকটি রূপ যে,
অ্যাসিড বৃষ্টি; তা হয়তো মেয়েটি বোঝেনি।
ফুটফুটে সুন্দর চেহারার মেয়েটি
আজ আর, আয়নার সামনে দাঁড়ায় না,
দাঁড়াতে ভয় পায়, লজ্জিত বোধ করে।
যে মেয়েটি, দিনের প্রায় সমস্ত সময়
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কল্পনায় ভাসত;
আজ, আর সে কল্পনা তাকে টানে না ।
নারীর রূপের কাছে, জয় হলো সামাজিক ব্যাধির,
যা, সামাজিক লজ্জা।
আজ আর, সে ভালোবাসার প্রস্তাব পায় না,
আজ আর, তাকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখে না,
সেতো অভাগী কঙ্কালসার সামাজিক প্রাণী,
আজ আর সে নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারে না ।
সে চলমান নারী বটে, রমনী তো নয় ।
তবে, এখানেই কি লজ্জাজনক ব্যাধির অবসান ?
– হয়তো, আপনার কল্পনায়, চরিত্রে নয়,
সাজানো আইনের চোখে, সমাজের চোখে তো নয়।
ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যান? – গঙ্গাজল,
বিয়েতে ভর্ৎসনা? -গঙ্গাজল ,
যৌন মিলনে বাধা? -গঙ্গাজল ,
পণ নিয়ে সংঘাত? -গঙ্গাজল ।
নারীর রূপকে ধ্বংস করতে পারে এ ব্যাধি,
কিন্তু, মনের শক্তি?
না, তাকে ধ্বংস করা কখনোই সম্ভব নয়;
মনের শক্তির জাগরণে নারী শক্তির জাগরণ।
এই জাগ্রত শক্তির আরাধনায়—
ধ্যানযজ্ঞে মগ্ন বিশ্বময় পূজারী ।
মাটির প্রতিমার সজ্জিত রূপে,
মাতৃরূপে করো পুজো, উৎসবেতে মাতো,
জয়মা বলে মায়ের পা, দাও ধুয়ে দাও
গঙ্গামায়ের গঙ্গাজলে ।
একই রূপের একই সত্তা পৃথক চোখে দেখো,
জীবন্ত মা কাঁদছে হেসে, আড়ালে মুখ ঢেকে
প্রতিমা মা, নীরব চোখে মিষ্টি মুখে,
উৎসব, নাচানাচি করছে গমন, সিঁদুর মেখে।
চরণামৃত করছে পান ভক্তকুলে মাথা পেতে ।
গঙ্গা জলে নারী পুজো,
ব্যাধির সমাজে, লজ্জিত পূজারী।